
এই পাঠ শেষে যা যা শিখতে পারবে-
১। ন্যানো টেকনোলজি ব্যাখ্যা করতে পারবে।
২। ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার বর্ণনা করতে পারবে।
৩। ন্যানো টেকনোলজির সুবিধা ও অসুবিধা বিশ্লেষণ করতে পারবে।
৪। ন্যানো টেকনোলজি কিভাবে আমাদের উপকারে আসে তা ব্যাখ্যা করতে পারবে।
Go for English Version
ন্যানো টেকনোলজি কী ? ন্যানো প্রযুক্তি কী?
“পারমাণবিক বা আণবিক স্কেলে অতিক্ষুদ্র ডিভাইস তৈরি করার জন্য ধাতব বস্তুকে সুনিপুণভাবে কাজে লাগানোর বিজ্ঞান বা প্রযুক্তিকে ন্যানো প্রযুক্তি বা টেকনোলজি বলে।“
ন্যানো টেকনোলজির জনক কে ?
১৯৫৯ সালে আমেরিকান বিখ্যাত পদার্থবিদ রিচার্ড ফাইনম্যান (Richard Feynman) তার “There’s Plenty of Room at the Bottom ” আলোচনায় প্রথম ন্যানো টেকনোলজির ধারণা বর্ননা করেছিলেন। যেখানে তিনি পরমাণুর প্রত্যক্ষ ম্যানিপুলেশনের মাধ্যমে সংশ্লেষণের সম্ভাবনা বর্ণনা করেছিলেন।
রিচার্ড ফাইনম্যান (Richard Feynman) কে ন্যানো প্রযুক্তির জনক বলা হয়।
ন্যানো কী ?
ন্যানো(Nano) শব্দটি গ্রিক nanos শব্দ থেকে এসেছে যার আভিধানিক অর্থ dwarft ( বামন বা জাদুকরী ক্ষমতাসম্পন্ন ক্ষুদ্রাকৃতির মানুষ)।
ন্যানো হলো একটি পরিমাপের একক। এটি কতটা ছোট তা কল্পনা করা কঠিন। ১ মিটারের ১০০ কোটি ভাগের এক ভাগকে বলা হয় ১ ন্যানো মিটার। অর্থাৎ 1 nm = 10-9 m। এখানে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হল:
- এক ইঞ্চিতে 25,400,000 ন্যানোমিটার রয়েছে
- সংবাদপত্রের একটি পাতা প্রায় 100,000 ন্যানোমিটার পুরু
- তুলনামূলক স্কেলে, একটি মার্বেল যদি ন্যানোমিটার হয়, তবে পৃথিবীর আকার হবে এক মিটার
আর এই ন্যানোমিটার (1 থেকে 100 ন্যানোমিটার) স্কেলে যে সমস্ত টেকনোলজি সম্পর্কিত সেগুলোকেই ন্যানো টেকনোলজি বলে।
অন্যভাবে বলা যায়- ন্যানো টেকনোলজি হলো এমন একটি বিজ্ঞান, প্রকৌশল এবং প্রযুক্তি যা সাধারণত ১ থেকে ১00 ন্যানোমিটার স্কেলে পরিচালিত হয়ে থাকে।
ন্যানো টেকনোলজিতে দুটি প্রধান পদ্ধতি
ন্যানো টেকনোলজিতে দুটি প্রধান পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। একটি হলো “bottom-up” বা নিচ থেকে উপরে এবং অপরটি “top-down” বা উপর থেকে নিচে।
“bottom-up” পদ্ধতিতে, বিভিন্ন উপকরণ এবং ডিভাইসগুলো আণবিক উপাদানগুলো থেকে তৈরি করা হয় যা আণবিক নীতির দ্বারা রাসায়নিকভাবে নিজেদেরকে একত্রিত করে। অর্থাৎ ক্ষুদ্র আকারের জিনিস দিয়ে বড় আকারের জিনিস তৈরি করা হয়।
“top-down” পদ্ধতিতে ন্যানো-অবজেক্টগুলি পারমাণবিক স্তরের নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই বৃহত্তর বস্তু থেকে নির্মিত হয়। টপ-টু-ডাউন পদ্ধতিতে কোন জিনিসকে কেটে ছোট করে তাকে নির্দিষ্ট আকার দেয়া হয়।
আমাদের বর্তমান ইলেক্ট্রনিক্স হল, “top-down” প্রযুক্তি। আর ন্যানোটেকনোলজির হল “bottom-up” প্রযুক্তি।
♦ ভিডিও লেকচার পেতে YouTube চ্যানেলটিতে Subscribe করো।
♦ HSC ICT প্রথম অধ্যায়ের নোট পেতে ক্লিক করো।
♦ ICT সম্পর্কিত যেকোন প্রশ্নের উত্তর জানতে Facebook গ্রুপে যুক্ত হও।
ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার
কম্পিউটার হার্ডওয়্যার তৈরিতে ন্যানো টেকনোলজি
কম্পিউটার এর সাথেও ন্যানোটেকনোলজি সম্পর্কিত। কম্পিউটার এর ভিতর যে প্রসেসর আছে, তা অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ন্যানোমিটার স্কেলের সার্কিট। আর তাতে ব্যবহৃত হচ্ছে ন্যানোটেকনোলজি। ইন্টেল প্রসেসরে, সিলিকন এর উপর প্যাটার্ণ করে সার্কিট বানান হয় তার বর্তমান সাইজ হল ১০০ ন্যানোমিটার। ভবিষ্যতে এর আকার হবে ৫০ ন্যানোমিটার। কম্পিউটারের হার্ডডিস্কের তথ্য সংরক্ষণের ক্ষমতা দিন দিন বাড়ছে ন্যানোটেকনোলজির প্রয়োগের কারণে।
ন্যানো রোবট তৈরিতে ন্যানো টেকনোলজি
ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করে অতি ক্ষুদ্র রোবট তৈরির গবেষণা চলছে , যার সাহয্যে মানবদেহের অভ্যন্তরের অস্ত্রপচার সম্ভব হবে।
ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রপাতি তৈরিতে ন্যানো টেকনোলজি
ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহাররে ফলে ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রপাতি আকারে ছোট, ওজনে হালকা এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হচ্ছে।
জ্বালানি তৈরিতে ন্যানো টেকনোলজি
কম খরচে জ্বালানি তৈরি, এবং বিভিন্ন প্রকার ব্যাটারির জন্য ফুয়েল সেল তৈরিতে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহৃত হচ্ছে।
প্যাকেজিং ও প্রলেপে ন্যানো টেকনোলজি
বিভিন্ন খাদ্যজাত পণ্যের প্যাকেজিং ও প্রলেপ তৈরিতে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহৃত হচ্ছে।
ঔষধ তৈরিতে ন্যানো টেকনোলজি
স্মার্ট ড্রাগ তৈরিতে ঔষধ শিল্পে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহৃত হচ্ছে।
খেলাধুলার সামগ্রী তৈরিতে ন্যানো টেকনোলজি
টেনিস বলের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি, বাতাসে গলফ বলের দিক ঠিক রাখার জন্য, র্যাকেটের শক্তি ও স্থায়িত্ব বৃদ্ধির জন্য ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহৃত হচ্ছে।
বস্ত্র শিল্পে ন্যানো টেকনোলজি
বস্ত্র শিল্পে কাপড়ের ওজন ও ঘনত্ব ঠিক রাখার জন্য ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহৃত হচ্ছে।
কৃত্তিম অঙ্গ-পতঙ্গ তৈরিতে ন্যানো টেকনোলজি
ন্যানো টেকনোলজির সাহায্যে বিভিন্ন কৃত্তিম অঙ্গ-পতঙ্গ তৈরি সম্ভব।
টিটানিয়াম ডাই-অক্সাইড তৈরিতে ন্যানো টেকনোলজি
সানস্ক্রিন এ ব্যবহৃত টিটানিয়াম ডাই-অক্সাইড তৈরিতে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহৃত হয়।
বাতাস পরিশোধনে ন্যানো টেকনোলজি
শিল্পকারখানা হতে নির্গত ক্ষতিকারক ধোঁয়াকে ন্যানো টেকনোলজির সাহায্যে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে অক্ষতিকারক গ্যাসে রূপান্তর করে বাতাস পরিশোধন করা যায়।
মহাকাশ অভিযানে ন্যানো টেকনোলজি
মহাকাশ অভিযানে ব্যবহৃত বিভিন্ন নভোযানকে হালকা করে তৈরি করতে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহৃত হয়।
কোন প্রযুক্তির মাধ্যমে আমাদের ভোগ্যপণ্য ছোট হতে থাকে?
ন্যানো টেকনোলজি কিভাবে আমাদের উপকারে আসে ?
HSC ICT প্রথম অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ টপিকসমূহ
- ভার্চুয়াল রিয়েলিটি
- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটিকস
- ক্রায়োসার্জারি
- বায়োমেট্রিক
- বায়োইনফরমেটিক্স
- জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং
ন্যানো টেকনোলজির সুবিধা
১। ন্যানোটিউব, ন্যানোপার্টিকেল ইত্যাদি দ্বারা তৈরি পণ্য অধিক মজবুত ও টেকসই, আকারে তুলনামূলক ছোট এবং ওজনে হালকা।
২। ন্যানো টেকনোলজির প্রয়োগে উৎপাদিত ঔষধ “স্মার্ট ড্রাগ” ব্যবহার করে দ্রুত আরগ্য লাভ করা যায়।
৩। খাদ্যজাত পণ্যের প্যাকেজিং এর সিলভার তৈরির কাজে।
৪। ন্যানো ট্রান্সজিস্টর, ন্যানো ডায়োড, প্লাজমা ডিসপ্লে ইত্যাদি ব্যবহারের ফলে ইলেকট্রনিক শিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হচ্ছে।
৫। ন্যানো প্রযুক্তি দ্বারা তৈরি ব্যাটারি, ফুয়েল সেল, সোলার সেল ইত্যাদির মাধ্যমে সৌরশক্তিকে অধিক্তর কাজে লাগানো যায়।
৬। ন্যানো টেকনোলজির প্রয়োগের ফলে উৎপাদিত ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্র বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী।
ন্যানো টেকনোলজির অসুবিধা
১। ন্যানোটেকনোলজি দিয়ে সার্কিট বানানোর প্রধান সমস্যা হল, স্থির বিদ্যুৎ। সাধারণ ইলেক্ট্রিক সার্কিটের মধ্যে এই স্থির বিদ্যুৎ থেকে সার্কিট কে রক্ষা করার ব্যবস্থা থাকে। যদি তা না করা হত, তাহলে কোন কারণে স্থির বিদ্যুৎ বৈদ্যুতিক সারঞ্জামকে নষ্ট করে দিত। কিন্তু ন্যানোটেকনোলজির ক্ষেতে বৈদ্যুতিক সার্কিট কল্পনাতিত ছোট হয়ে যায় বলে গতানুগতিক পদ্ধতিতে রক্ষা করা সম্ভব নয়। প্রকৃতপক্ষে ছোটসার্কিটে স্থিরবিদ্যুত প্রায় ১৫০০০ সেন্টিগ্রেড এর মত তাপ সৃষ্টি করে। এই তাপে সার্কিট এর উপকরণ গলে, সেই সার্কিটটিকে নষ্ট করে দিতে পারে। এই কারণে ১৯৯৭ এর পরে IC সার্কিটে গতানুগতিক ভাবে ব্যবহৃত এলুমিনিয়ামের পরিবর্তে তামা ব্যবহৃত হয়। কেননা তামার গলনাঙ্ক ১০৮৩ যেখানে এলুমিনিয়ামের গলনাঙ্ক ৬৬০০ সেন্টিগ্রেড। ফলে অধিক তাপমাত্রাতেও তামা এ্যালুমিনিয়ামের তুলনায় ভাল কাজ করবে।
২। ন্যানো টেকনোলজি ব্যয়বহুল। ফলে এই প্রযুক্তির প্রয়োগে উৎপাদিত পন্য ব্যয়বহুল।
৩। ন্যানোপার্টিকেল মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
HSC ICT এর সকল অধ্যায়
- প্রথম অধ্যায়ের টপিকসমূহ
- দ্বিতীয় অধ্যায়ের টপিকসমূহ
- তৃতীয় অধ্যায়ের টপিকসমূহ
- চতুর্থ অধ্যায়ের টপিকসমূহ
- পঞ্চম অধ্যায়ের টপিকসমূহ
- ষষ্ঠ অধ্যায়ের টপিকসমূহ
পাঠ মূল্যায়ন-
জ্ঞানমূলক প্রশ্নসমূহঃ
ক। ন্যানো টেকনোলজি কী?
অনুধাবনমূলক প্রশ্নসমূহঃ
খ। আণবিক পর্যায়ের গবেষণার প্রযুক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
খ। “ন্যানো টেকনোলজি স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে” -ব্যাখ্যা কর।
সৃজনশীল প্রশ্নসমূহঃ
উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নের উত্তর দাওঃ
চিপস সবার খুব প্রিয়। চিপস প্যাকেটজাতকরণের সময় একটি বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। চিপস কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য প্রবেশের পথে আঙ্গুলের ছাপ দেওয়ার জন্য একটি ডিভাইস স্থাপন করা হয়েছে।
ঘ) চিপসেরব ক্ষেত্রে ব্যবহৃত প্রযুক্তির সুবিধা ও অসুবিধা উল্লেখসহ তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।
উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নের উত্তর দাওঃ
গবেষণা প্রতিষ্ঠান আলফা-এর বিজ্ঞানীগণ রোগাক্রান্ত কোষে সরাসরি ঔষধ প্রয়োগ করার জন্য আণবিক মাত্রার একটি যন্ত্র তৈরির চেষ্টা করছেন। ব্রেইনের অভ্যন্তরের গঠন ও কোষ পর্যবেক্ষণের জন্য তারা একটি সিমুলেটেড পরিবেশ তৈরি করেন।
ঘ) উদ্দীপকে উল্লিখিত যন্ত্র তৈরির প্রযুক্তিটি খাদ্য-শিল্পে কী ধরনের প্রভাব রাখে – বিশ্লেষণ কর।
উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নের উত্তর দাওঃ
জনাব শিহাব একজন বৈমানিক। তিনি কম্পিউটার মেলা থেকে ১ টেরাবাইটের একটি হার্ডডিস্ক কিনলেন। এটির আকার বেশ ছোট দেখে তিনি অবাক হলেন। প্রযুক্তির অগ্রযাত্রায় বিভিন্ন ডিভাইসের আকার ছোট হয়ে আসছে ।বিমান চালনা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাতেও পরিবর্তন এসেছে । এখন সত্যিকারের বিমান ব্যবহার না করে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে বিমান পরিচালনা প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
গ) উদ্দীপকে ছোট আকারের হার্ডডিস্ক এর ধারন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে তার বর্ণনা দাও।
বহুনির্বাচনি প্রশ্নসমূহঃ
১। ১ ন্যানো সমান-
ক) একশত কোটি ভাগের এক ভাগ খ) এক কোটি ভাগের এক ভাগ
গ) দশ কোটি ভাগের এক ভাগ ঘ) এক হাজার কোটি ভাগের এক ভাগ
২। এক ন্যানোমিটার সমান কত মিটার?
ক) 10-6 মিটার খ) 10-7 মিটার গ) 10-8 মিটার ঘ) 10-9 মিটার
৩। আণবিক পর্যায়ে পদার্থকে পরিবর্তন ও নিয়ন্ত্রণ করার বিদ্যাকে বলা হয়-
ক) জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং খ) নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং গ) বায়োইনফরমেটিক্স ঘ) ন্যানোটেকনোলজি
৪। ন্যানো প্রযুক্তির জনক বলা হয় কাকে?
ক) জোহান্স মেন্ডেস খ) লুই পাস্তুর গ) রিচার্ড ফাইনম্যান ঘ) মার্শাল মাকলুহান
৫। যেসব বস্তু নিয়ে ন্যানো প্রযুক্তিতে কাজ করা হয় তাদের মাত্রা কত ন্যানোমিটারের কম?
ক) ১ খ) ১০ গ) ১০০ ঘ) ১০০০
এই অধ্যায়ের সকল MCQ দেখতে ক্লিক করো
Written by,
- Mizanur Rahman (Mizan)
- Lecturer in ICT, Shaheed Bir Uttam Lt. Anwar Girls’ College , Dhaka Cantonment
- Founder & Author at www.edupointbd.com
- Software Engineer at mands IT
- Former Lecturer in ICT, Cambrian College, Dhaka
- Contact: 01724351470